শিলিগুড়ি, ৮ এপ্রিল : পথের পাঁচালীর অপুর অবাক বিস্ময়ে রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার গল্প অনেক শিশুমনেই প্রভাব ফেলে। গ্রামে গঞ্জে এখনও একদল শিশু জড়ো হয়ে রেলগাড়ি রেলগাড়ি খেলা খেলে থাকে। শিশুদের মনে রেলগাড়ির প্রতি যে একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে তা এই উদাহরণ গুলি থেকেই স্পষ্ট । তাই শুধুমাত্র পড়াশুনার গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে পড়া পড়া খেলার অনুভুতি মনে জাগরিত করতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেলগাড়ির কামরার রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা গেছে অন্যদিকে চিরাচরিত স্কুলের চারদেওয়ালের মরচে ধরা রঙ আলাদা মাত্রা পেয়েছে।
আর এই অভিনব স্কুলটি শিলিগুড়ি শহরের অদূরে জঙ্গল ঘেরা রাজগঞ্জ ব্লকের শিমূলগুড়িতে অবস্থিত সি এস প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৯ সালে স্কুলটির পোড়ামাটির রূপ বদলে সর্বসম্মতিক্রমে রেলগাড়ির কামরার রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে স্কুলটি নতুন রূপ পেতেই করোনার জেড়ে স্কুল দু বছর বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়টির এই রূপ দূর থেকে পড়ুয়ারা দেখে খুশি হলেও স্কুলে না আসতে পারার জন্য আক্ষেপ করতে থাকে। পরে চলতি বছর স্কুল খোলা হতেই পড়ুয়ারা ছুটে আসে স্কুলে। স্কুলের যেসব পড়ুয়াদের লকডাউনে বাড়িতে থেকে থেকে স্কুলে আসার অভ্যেস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তারাও সহপাঠীদের মুখে স্কুলের এই ভোলবদলের কথা শুনে স্কুলে আসতে আগ্রহী হয়৷ ফলে স্কুলের ১০৩ জন পড়ুয়ার সকলেই নিয়মিত স্কুলে আসতে শুরু করেছে বলে জানান স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল কান্তি সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ধারণায়, নতুন আঙ্গিকে যদি শৈশবকে পড়াশোনার বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তাতে পড়াশুনার প্রতি শিশুরা বেশি করে আকৃষ্ট হয়। এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, রাজ্যে আরও কিছু স্কুলে এমন ছবি রয়েছে বলে জেনেছি। তা দেখেই এই ভাবনা চেপে বসে। রেলগাড়ি যেভাবে একজন যাত্রীকে তাদের নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। স্কুলও ঠিক সেভাবেই একজন পড়ুয়ার তার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করবে। এই কর্মকাণ্ডের পেছনে মূল উদ্যেশ্য ছিল পড়ুয়াদের আরও বেশী করে স্কুলমুখী করে তোলা। তা সফল হয়েছে।”